বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই স্বল্পমেয়াদের বায়ার্স ক্রেডিটে ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখন থেকে বিভিন্ন ব্যাংক আমদানিকারকের নিজস্ব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে ১৮০ দিন পর্যন্ত বায়ার্স ক্রেডিটে গ্যারান্টি প্রদান করতে পারবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনটি অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিল্পে ব্যবহূত কাঁচামাল আমদানিতে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইআইটিএফসি) অনুকূলে বিভিন্ন ব্যাংক স্বল্পমেয়াদে গ্যারান্টি ইস্যু করতে পারবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। তবে ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই ঋণ নিয়মাচার যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে। এক্ষেত্রে একক গ্রাহক ঋণসীমা কোনো অবস্থাতেই অতিক্রম করে অর্থায়ন করা যাবে না। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের বায়ার্স ক্রেডিটের তথ্য চাইলে ব্যাংকগুলোকে আমদানির বিল অব এন্ট্রিসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
বায়ার্স ক্রেডিট হলো একটি দেশের আমদানিকারকের বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া ঋণ। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি সাপেক্ষে বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ওই পণ্য আমদানি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।
বিদেশী অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এ ধরনের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিজস্ব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের লক্ষ্যে কাঁচামাল আমদানির প্রস্তাব খুব বেশি দেখা যায় না। তবে আইআইটিএফসির মতো কিছু প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে জেপি মরগান, আইএফসি, আইডিবি, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের আমদানিকারকদের বায়ার্স ক্রেডিট দিচ্ছে।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বায়ার্স ক্রেডিট গ্রহণের ব্যবস্থা চালু করে একটি পরিপত্র জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই থেকে দেশের উদ্যোক্তারা মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ইত্যাদি আমদানিতে এ ঋণ গ্রহণ করে আসছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বায়ার্স ক্রেডিট ব্যবস্থা চালু আছে। তবে এর সুদহার অনেক কম। কারণ বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে, যাদের উদ্বৃত্ত তারল্য বিনিয়োগের ব্যবস্থা নেই। ওইসব দেশ বায়ার্স ক্রেডিট দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ অবশ্যই এ সুবিধা নিতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে সুদের হারের বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। একইসঙ্গে কী পরিমাণ ঋণ আসছে, তারও স্পষ্ট পরিসংখ্যান থাকা প্রয়োজন।